শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করবে কে?
- আপলোড সময় : ১৫-১২-২০২৪ ০৭:৪৯:০০ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৫-১২-২০২৪ ০৭:৪৯:০০ পূর্বাহ্ন
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছরের মাথায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছিল সরকার। চার ধাপে ৫৬০ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম প্রকাশ করেছিল তৎকালীন সরকার। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এখন দৃশ্যপট অনেক পাল্টে গেছে। থমকে গেছে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরির কাজও। এ তালিকা পূর্ণাঙ্গ হবে কি না, এ নিয়েই এখন সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের মতো শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবারকে ভাতা দেওয়ার চিন্তাভাবনা ছিল। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই মা-বাবার নাম শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকায় লিপিবদ্ধ করতে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেন। পরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আর্থিক কোনো সুবিধা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরপর এ তালিকায় নাম উঠানো নিয়ে অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। যাচাই-বাছাই কমিটি নিজেদের মতো করে বিভিন্ন তালিকা সংগ্রহ করে সেখান থেকে ৫৬০ জনের নাম গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে।
২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর যাচাই-বাছাই কমিটির প্রথম সভায় প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ২২২ জন বুদ্ধিজীবীর তালিকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭২ সালের ১ হাজার ৭০ জনের তালিকা এবং পরবর্তী সময়ে ডাকটিকিট হিসেবে ডাক বিভাগ প্রকাশিত ১৫২ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকাও সে সময় প্রাথমিক অনুমোদন পায়। ২০২৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আগে তাঁদের তালিকা চূড়ান্ত করার কথা ছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের। সেই বাছাই কমিটির প্রধান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব। একজন অতিরিক্ত সচিবকে সদস্য এবং একজন উপসচিবকে এ কমিটির সদস্যসচিব করা আছে। গবেষক হিসেবে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের ট্রাস্টি চৌধুরী শহীদ কাদের, জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন পরিচালক বায়েজিদ খুরশীদ রিয়াজ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী সাজ্জাদ জহির বীর প্রতীককে কমিটিতে রাখা হয়েছে।
যাচাই-বাছাই কমিটির দুজন সদস্যের সঙ্গে গত দুই দিন চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। এই কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকারের পতন হওয়ার পর আমরা আর এসব করছি না। মন্ত্রণালয় থেকেও আমাদের এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। ফলে ধরে নিয়েছি, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা আর হচ্ছে না।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরীও জানান, যাচাই-বাছাই কমিটির কার্যকারিতা আর নেই। আমরা একটু ধীরে যাচ্ছি। কার্যক্রম বন্ধ হয়ে
গেছে এমন নয়। আপাতত স্থগিত রয়েছে।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়নের কার্যক্রম আর এগোবে না বলে আভাস দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমও। তিনি বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ৫৬০ জনের তালিকা আছে। ওই কার্যক্রম এখন বন্ধ আছে। এত দিন পরে এসে এসব তালিকা করা দুরূহ ব্যাপার। অনেকের সন্তানেরাও বেঁচে নেই। এ জন্য এটি দুরূহ ও জটিল কাজ।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, যুদ্ধের পরপর কেন এ তালিকা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, তার কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা জাতি এখন পর্যন্ত পায়নি। গণ-অভ্যুত্থানে যাঁরা নিহত ও আহত হয়েছেন, তাঁদের তালিকা করার জন্য সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরও এটিকে নিñিদ্র করা যাচ্ছে না। অনেকের লাশ পোড়ানো হয়েছে, অনেকের লাশ গোপনে দাফন করা হয়েছে। বিভিন্নজন বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে আসছে। এগুলোকে যাচাই-বাছাই করে মূল বিষয়গুলোও সম্পন্ন করা যাচ্ছে না।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ